Header Ads

সারাদেশে মানুষের কাছে অতিপরিচিত ও বিখ্যাত কয়েকটি ট্যুর স্পট টাঙ্গাইলে Gaan O Kobita Ghor

ঢাকার অতি কাছে টাঙ্গাইলের কয়েকটি ট্যুর স্পট সারাদেশে মানুষের কাছে অতিপরিচিত ও বিখ্যাত।


 প্রকৃতির অনিন্দ্য সৌন্দর্য্য ও নিরিবিলি পরিবেশে একটু মানসিক শান্তি খুঁজতে চলে যেতে পারেন ঢাকার খুব কাছের জেলা টাঙ্গাইলে। 

ঢাকা থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই জেলায় রয়েছে গ্রাম্য প্রাকৃতিক পরিবেশ। বিশেষ করে টাঙ্গাইলে রয়েছে নান্দনিক নির্মানশৈলী সম্বৃদ্ধ অনেকগুলা জমিদার বাড়ি এবং বিভিন্ন সময়ে নির্মিত বেশকিছু প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন। 

মহেড়া জমিদার বাড়ি: টাঙ্গাইলের প্রাচীন নিদর্শনগুলোর মধ্যে মহেড়া জমিদার বাড়ি অন্যতম। এখনো কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে তিনটি বিশাল ইমারত। গ্রামের ছায়াঘেরা পরিবেশ, পাখির কল কাকলি মুগ্ধ করবে এখানে ঘুরতে আসা দর্শণার্থীদের। টাঙ্গাইল সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মহেড়া জমিদার বাড়ি। আট একরের মতো জায়গা জুড়ে এর অবস্থান। এখানকার রকমারি দেশি-বিদেশি ফুলের সমারোহ ও সুশোভন বাহারি পাতাবাহার আপনাকে দেবে এক অন্যরকম ভ্রমণের সুখ! জমিদার বাড়িটির এন্ট্রি ফি ৮০ টাকা। মূল গেইট দিয়ে ঢুকতেই দেখা যায় বিশাখা সাগর নামে এক দিঘী। যেখানে একসময় সুপেয় পানিও পাওয়া যেত। দিঘীর পানিতে ভাসছে প্যাডেল বোট। চাইলে টিকিট কেটে বোট চালানো যায়। ঢাকার খুব কাছের জেলা হওয়ায় মহেড়া জমিদার বাড়িটি ভ্রমণ পিপাসুদের আনাগোনায় মুখর থাকে সবসময়ই। বাড়িতে প্রবেশের জন্য রয়েছে ২টি প্রবেশ দ্বার, যার ওপর রয়েছে সিংহের মুর্তি। গেট পার হয়ে ভিতরে প্রবেশ করলে দেখা যায় বড় বড় সুউচ্চ ভবন। কাছারি বাড়ীর নাম মহারাজ লজ, আনন্দ লজ, চৌধুরী লজ এবং কালীচরণ লজ। এই জমিদার বাড়িটির রয়েছে এক কষ্টের স্মৃতি। 

১৯৭১ সালের ১৪ মে, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী মহেড়া জমিদার বাড়িতে হামলা করে। জমিদার বাড়ির কূলবধূ যোগমায়া রায় চৌধুরীসহ পাঁচজন গ্রামবাসীকে চৌধুরী লজের মন্দিরের পেছনে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। এরপর শত বছরের সাজানো জমিদার বাড়ির সবকিছু ফেলে ভারতে চলে যায় বাকিরা। পরে ১৯৭২ সালে পরিত্যাক্ত জমিদার বাড়িটি পুলিশ ট্রেনিং স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ১৯৯০ সালে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলকে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে উন্নীত করা হয়। জমিদার আমলে ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাবপত্র নিয়ে একটি মিউজিয়ামও আছে এখানে। যেহেতু জমিদার বাড়িটি এখন পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, তাই এই মিউজিয়ামে পুলিশ বাহিনীর ব্যবহৃত কিছু জিনিস পত্রও রয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন রকম পোশাক, বন্দুক ছাড়াও বিভিন্ন সম্মননা স্মারক আছে এখানে। জমিদার বাড়িটির পিছনের দিকে রয়েছে ‘পাসরা’ ও ‘রানী পুকুর’ নামে আরো দুইটি পুকুর। রানী পুকুরটি ছিল জমিদার বাড়ির রানীদের ব্যবহারের জন্য। অপর একটি পুকুরের ওপর অর্ধেক সেতু আর ফোয়ারার অপরুপ সৌন্দর্য্য মুগ্ধ করবে সবাইকে। 

এর পাশাপাশি সুইমিংপুল, দোলনা, নাগরদোলা, বাচ্চাদের বিভিন্ন রাইডসহ রয়েছে নানা ধরনের বিনোদন ব্যবস্থা। এখানে ডে লং ট্যুরের সাথে রাত্রি যাপনের জন্যও সুব্যবস্থা রয়েছে। একসময় জমিদাররা যে ঘরে থাকতো সেঘরে রাত্রি যাপনের জন্য বেশ মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হবে। ঘুরতে গেলে নানা ধরনের স্পট ঘুরে বেড়ানোর সাথে নানাপদের খাবারের বিষয়টিও কিন্তু খুবই প্রাসঙ্গিক। জমিদার বাড়ির কাছেই রয়েছে একটি রেস্তোরাঁ। 

সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে দুপুর এবং রাতের খাবার পাওয়া যায় সেখানে। ঢাকা থেকে গেলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে জামুর্কী বাসস্ট্যান্ডের উত্তর দিকে মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং লেখা সাইনবোর্ডের কাছে নামতে হবে। সেখান থেকে অটোরিক্সা নিয়ে চলে যেতে পারেন মহেড়া জমিদারবাড়িতে। আতিয়া জামে মসজিদ: টাঙ্গাইল শহর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে দেলদুয়ার উপজেলায় অবস্থিত আতিয়া জামে মসজিদ। সুলতানি ও মুঘল আমলের স্থাপত্য শিল্পরীতির সমন্বয়ে নির্মিত এ মসজিদের পরিকল্পনা ও নির্মাণ কাজে নিযুক্ত ছিলেন প্রখ্যাত স্থপতি মুহাম্মদ খাঁ। সারা বছর প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে এখানে। ইতিহাসে পরিচিত ও ভ্রমণপ্রিয় মানুষের কাছে অতিপরিচিত এই মসজিদটি। বাংলাদেশের টাকায় রয়েছে এই মসজিদটির ছবি। 


 মসজিদের ‘আতিয়া’ শব্দটি আরবি শব্দ। এর উৎপত্তি হয়েছে ‘আতা’ থেকে যার বাংলা অর্থ হলো ‘দান’। পঞ্চদশ শতকে এ অঞ্চলে আদম শাহ্ বাবা কাশ্মিরি নামে বিখ্যাত এক সুফি ধর্মপ্রচারক আসেন। তখনকার বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হুসাইন শাহ তাকে আতিয়ার জায়গিরদার করেন। ওই সময় কররানী শাসক সোলাইমান কররানীর কাছ থেকে তার ধর্মীয় কার্য পরিচালনার ব্যয়ভার বহনের জন্য বিশাল একটি এলাকা ওয়াকফ্ হিসাবে পান। সেই থেকে এই পরগণার নাম হয় আতিয়া। শাহ্ বাবা কাশ্মিরির পরামর্শে প্রিয় ভক্ত সাঈদ খান পন্নীকে মোগল বাদশাহ জাহাঙ্গীর আতিয়া পরগণার শাসন কর্তা নিয়োগ করেন। সাঈদ খান পন্নী ১৬০৮ সালে আতিয়া মসজিদ নির্মাণ করেন। আতিয়া মসজিদটিতে চারকোণে ৪টি বিরাট অষ্টকোণাকৃতীর মিনার রয়েছে। মিনারগুলো ছাদের অনেক উপরে উঠে ছোট গম্বুজে শেষ হয়েছে। বাংলার স্থাপত্যসমূহ মূলত ইটের তৈরি। তাই বাংলার স্থাপত্য এবং তার অলংকরণ সবই বিকশিত হয়েছে ইটের মাধ্যমেই। আতিয়া মসজিদটিতে নান্দনিক পোড়ামাটির টেরাকোটার নকশা যেকোন ভ্রমণপ্রিয় মানুষকে মুগ্ধ করবে। 





 দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা ধর্মের মানুষও আসেন চমৎকার এই মসজিদটি দেখতে। এর দেয়ালে রয়েছে বহু বৈচিত্রময় নির্মাণ শৈলী। বিদায়ী সুলতানি আর নবাগত মুঘল উভয় রীতির সংমিশ্রণে অপূর্ব এক মুসলিম স্থাপত্য এই আতিয়া জামে মসজিদ। টাঙ্গাইল অঞ্চলে প্রাপ্ত মূল শিলালিপিগুলোর মধ্যে আতিয়া জামে মসজিদে প্রাপ্ত একটি আরবি এবং একটি ফারসি শিলালিপি রয়েছে। যা দৃষ্টিনন্দন ও এ অঞ্চলে বিরল। টাঙ্গাইল শহর থেকে সিএনজি অটোরিক্সায় আতিয়া মসজিদ যাওয়া যায় খুব সহজেই। নাগরপুর জমিদার বাড়ি: এই জমিদার বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় অবস্থিত। স্থানীয়ভাবে চৌধুরী জমিদার বাড়ি নামেও পরিচিত। ১৯৪৭ এর দেশ ভাগের পর তদানিন্তন সরকার চৌধুরী বাড়ীর সকল সম্পদ অধিগ্রহণ করে। বর্তমানে চৌধুরী বাড়ীর এই মূল ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নাগরপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজ। সুবিদ্ধা-খাঁ-র সূত্র ধরেই চৌধুরী বংশ নাগরপুরে জমিদারি শুরু করেন চৌধুরী বংশের প্রথম পুরুষ যদুনাথ চৌধুরী। বৃটিশ সরকার এই বাড়ির ছেলে সতীশ চন্দ্র রায় চৌধুরীকে সাধারণ জনগোষ্ঠীর জন্যে বিভিন্ন সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ রায় বাহাদুর খেতাবে ভূষিত করেছিল। ছোট ছেলে সুরেশ চন্দ্র রায় ছিলেন খুব ক্রীড়ামোদী। উপ-মহাদেশের বিখ্যাত ফুটবল দল ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি। অট্টালিকাটির অভ্যন্তরের পুরো কাজটি সুদৃশ্য শ্বেত পাথরে গড়া। 


পাশ্চত্য এবং মোঘল সংস্কৃতির মিশ্রনে এক অপূর্ব নান্দনিক সৌন্দর্যে নির্মিত এই বৈঠকখানার উপরে ছিল নহবতখানা। সেখান থেকে প্রতিদিন ভোরে ছড়িয়ে পড়া সানাই-এর ধ্বনীতে ঘুম ভাঙ্গত সকলের। শোনা যায়, রায় বাহাদুরের ছোট ভাই সুরেশ চৌধুরী নাগরপুরকে কলকাতার আদলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। একটা সময় চৌধুরী বাড়ীর রঙ্গমহলের পাশেই ছিল সুদৃশ্য চিড়িয়াখানা। যেখানে শোভা পেত- ময়ূর, কাকাতোয়া, হরিণ, ময়না, বাঘ, সিংহ। এখন অবশ্য এর কোনো কিছুই নেই। 

সাক্ষী হিসেবে রয়েছে শুধু কয়েকটি ভগ্নপ্রায় দালান। টাঙ্গাইল ডিসি লেক: টাঙ্গাইল শহরবাসীর বিনোদনের জন্য টাঙ্গাইল সদরে কৃত্তিমভাবে বানানো হয়েছে ডিসি লেক। বিশেষকরে স্থানীয় মানুষের বিকেল কিংবা সন্ধ্যার অবসর কাটানোর জন্য খুব সুন্দর একটি জায়গা এই লেক। শুরুতে স্থানীয়দের বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু হলেও এখন ঢাকাসহ আশেপাশের ভ্রমণপ্রিয় মানুষের কাছেও অন্যতম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে লেকটি। ছোট নৌকায় ঘুরে বেড়ানোরও সুযোগ রয়েছে এখানে। 


 এছাড়া বাচ্চাদের জন্য রয়েছে শিশু পার্ক। প্রায় ৩৩ একর আয়তনের ডিসি লেকের ভাসমান মঞ্চের ভেতরে রয়েছে ফাস্ট ফুডের কয়েকটি দোকান। পশ্চিম পাশেও রয়েছে খাবারের বেশ কয়েকটি দোকান। প্রিয়জনকে নিয়ে খানিকটা সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। পাখিদের কৃত্রিম বাসস্থানের পাশাপাশি বিলুপ্তপ্রায় পানকৌড়ি দেখা যায় এই ডিসি লেকে। শীতকালে কিছু পরিযায়ী পাখিরও দেখা মেলে। জেলার নতুন বাসস্ট্যান্ড থেকে শামছুল হক তোরণ পার হয়ে ডান দিকে গেলেই টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজের পাশেই টাঙ্গাইল ডিসি লেক।

No comments

লেখাটি আপনার কেমন লেগেছে অনুগ্রহ করে কমেন্ট করে জানাবেন।
আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। আপনিও আপনার জানা বা দেখা যে কোন ওইতিহাসিক-ভ্রমন স্থান সম্পর্কে অথবা আপনার লেখা কবিতা পাঠান আর আমাদের গান ও কবিতা ঘরের সদস্য হয়ে যান। ধন্যবাদ- all-banglakobita.com (ক্লিক করুন -আপনার লেখা)

Powered by Blogger.