বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (Science and Technology) (গান ও কবিতা ঘর)
ও প্রযুক্তি (Science and Technology)
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নীতি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে
পরামর্শ প্রদানের জন্য দেশের রাষ্ট্রপতিকে প্রধান করে ১৯৮৩ সালে একটি উচ্চ
ক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমিটি (এনসিএসটি) গঠিত হয়। কমিটি তিন
বছর পর একটি খসড়া জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নীতি প্রণয়ন করে যা ১৯৮৬ সালে
আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হয়। জাতীয় কমিটির অধিকাংশ সদস্যদের নিয়ে গঠিত নির্বাহী
কমিটির মাধ্যমে এনসিএসটি তার কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এই কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কমিটির
প্রায় এক ডজন উপদেষ্টা রয়েছে যারা জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নীতি, অগ্রাধিকার প্রাপ্ত
গবেষণাসমূহের চিহ্নিতকরণ, উন্নয়ন কর্মকান্ডের সঙ্গে গবেষণা কর্মকান্ডের
সমন্বয় সাধন, জাতীয় বিজ্ঞান বিষয়ক তথ্যাদি সংরক্ষণ ব্যবস্থা তদারকি প্রভৃতি
বিষয়ে কমিটিকে পরামর্শ প্রদান করে থাকে। এনসিএসটি বিজ্ঞানের ছাত্র ও গবেষক
বিজ্ঞানীদের বৃত্তি প্রদান এবং অল্প সংখ্যক গবেষণা প্রকল্পে অর্থায়ন করে
থাকে।জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নীতি পাঁচটি প্রধান শিরোনামের আওতায় বর্ণিত।
বিজ্ঞান বিষয়ক জ্ঞানের উন্নয়ন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে জাতীয় পর্যায়ে
অগ্রাধিকার প্রদান করার পেছনে যুক্তিপ্রদান প্রভৃতি বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
পরবর্তী শিরোনাম হচ্ছে লক্ষ্য ও কৌশল, যেখানে এক পাতার বর্ণনায় বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি নীতির সাধারণ লক্ষ্যসমূহ যেমন- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতিযোগিতায়
অবতীর্ণ হওয়া এবং স্বনির্ভরতা অর্জন, বিশ্বব্যাপী বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সমৃদ্ধিতে
অবদান রাখা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা এবং
শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণসহ দেশের গবেষণা ও উন্নয়ন কাঠামোর পুনর্বিন্যাস সাধন প্রভৃতি
বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নীতির প্রধান উপাদানসমূহ
শিরোনামে তৃতীয় অধ্যায়টি হচ্ছে এই দলিলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বার পৃষ্ঠার
এই অধ্যায়ে বারোটি উপ-শিরোনামে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নীতি বাস্তবায়নের
জন্য প্রয়োজনীয় সকল বিবেচ্য বিষয়সমূহের বিস্তারিত বর্ণনা এবং সকল উপদেষ্টা
পরিষদ সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসকল বিষয়সমূহের মধ্যে রয়েছে গবেষণা ও
উন্নয়ন কার্যক্রেমর সমন্বয় সাধন,
অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রাধান্যের
ভিত্তিতে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম নির্বাচন, প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, জনশক্তি উন্নয়ন
প্রভৃতি। বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের পেশাগত উন্নয়নের সুযোগ নিশ্চিতকরণ, বিজ্ঞান বিষয়ে
ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করা, দেশীয় প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধন ও বিজ্ঞানভিত্তিক
তথ্যায়ন ব্যবস্থা সুসংগঠিতকরণের লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক জাতীয় কমিটি
স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে মানসম্পন্ন বিজ্ঞান শিক্ষার উন্নয়নের
ব্যাপারেও কার্যক্রম গ্রহণ করে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ব্যয় মোট জাতীয়
উৎপাদনের ০.৩ শতাংশ থেকে ১.০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে একটি সুপারিশ জাতীয়
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং সেই সঙ্গে এই ব্যয়
সংস্থানের জন্য বেশ কিছু সুপারিশও প্রদান করা হয়েছে যেমন, সরকারের উদ্দেশ্য
বাস্তবায়নের জন্য বিজ্ঞানীদের অংশগ্রহণ করানো, সকল উৎপাদনকারী (শিল্প-কারখানা) খাতসমূহের
ওপর সারচার্জ আরোপ, বৈদেশিক উৎসসমূহ প্রভৃতি। জাতীয় বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি নীতি একটি সুস্পষ্ট ব্যাপক দলিল যাতে স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত
সকল স্তরে বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষার মান উন্নয়নের বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এটিকে কার্যকরী করার জন্য স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যক্রম থেকেই বিজ্ঞান শিক্ষার সঙ্গে
পরিচিতি ঘটানোর সুপারিশ করা হয়েছে এবং এ লক্ষ্যে মানসম্পন্ন শিক্ষক, ভৌত সুযোগ-সুবিধা, যন্ত্রপাতি, বইপুস্তক, জার্নাল, শিক্ষা উপকরণ
প্রভৃতি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিজ্ঞান শিক্ষার সম্প্রসারণের
জন্য একাধিক উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশও করা হয়েছে।বাংলাদেশ
আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে প্রবেশের পর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
পরিকল্পনায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু দেশের মুক্তবাজার অর্থনীতিতে
উত্তরণের সঙ্গে অভিযোজন মোটেই স্বাভাবিক হয়নি এবং বর্তমানেও এই অভিযোজন
প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গতা প্রাপ্তি বহু দূর বলে বিবেচিত। পরিবর্তিত বিশ্ব
পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
নীতিতে সম্ভাব্য পরিমার্জনের লক্ষ্যে এই নীতির কিছু কিছু বিষয় বর্তমানে
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত অর্জন বহুসংখ্যক বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, ৭৪টি গবেষণা ও উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, বিভিন্ন সাধারণ
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪টি বিজ্ঞান বিভাগ এবং কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ থাকা
সত্ত্বেও কেবল কৃষি ছাড়া বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অর্জন খুবই
সামান্য। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)-এর মতো খ্যাতনামা
প্রতিষ্ঠান নিজস্ব অনেক পেটেন্ট থাকলেও শুধু অল্প কিছু সাধারণ খাদ্যবস্ত্ত জাতীয়
দ্রব্য বাজারজাত করছে, যেগুলি আবার পণ্যের পরিমাণ ও মূলধন বিবেচনায়
বাজারের খুবই সামান্য স্থান দখল করতে পেরেছে। কৃষি ও জৈবচিকিৎসা খাতের ব্যাপক মাঠ
পর্যায়ের সমীক্ষার বিপরীতে শিল্পখাতের গবেষণা ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানসমূহ দেশের
জন্য উল্লেখযোগ্য কোন পণ্য কিংবা সেবা প্রদান করতে সক্ষম হয় নি।কৃষিখাতে গবেষণা ও
উন্নয়ন কর্মকান্ড অপরিহার্যভাবেই কয়েকটি শস্যের ওপরে সীমাবদ্ধ,
যার মধ্যে ধান
সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং এর পরে রয়েছে চা, পাট, গম ও ডাল জাতীয় শস্যসমূহ। ধান গবেষণার
ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-বিরি (BRRI) ফিলিপাইনে অবস্থিত
আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ইরি (IRRI)-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে বিগত
দশকসমূহে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ড সবুজ বিপ্লব
শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিচালিত হয় এবং বছরের পর বছর উচ্চ মাত্রার সাফল্য অর্জন
করে টিকে রয়েছে। বিরি কর্তৃক উদ্ভাবিত ৩৬ প্রকার শস্যবৈচিত্র্য কৃষক পর্যায়ে
ব্যবহূত হচ্ছে এবং এখনও নতুন নতুন বৈচিত্র্য উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে
হাইব্রিড বা সংকর প্রজাতির ধান। এই সাফল্যের আংশিক কৃতিত্ব এই প্রতিষ্ঠানের
কর্মপ্রকৃতির স্বাভাবিকতা। বাকি সাফল্য ইরি-র মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে
গবেষণা কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য। পাট বিষয়ক গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধান
গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট পাটের কয়েক প্রকার ভাল জাত
উদ্ভাবন করলেও বিরি-র মতো প্রশংসা অর্জন করতে পারে নি। পাটের অন্যতম
প্রতিদ্বন্দ্বী কৃত্রিম অাঁশের সঙ্গে প্রাকৃতিক পাট তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি
হওয়ার দরুন পাটের ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্য খুব সামান্যই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে
পেরেছে।দেশে বর্ধিত মাত্রায় খাদ্যশস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিরি এককভাবে দায়িত্ব
পালন করে আসছে এবং খাদ্যশস্যের বর্তমান উৎপাদন প্রায় স্বনির্ভর পর্যায়ে রয়েছে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভবিষ্যত কর্মসূচি হলো বর্তমানের জনপ্রিয় ‘সংকর
ধান’-এর উৎপাদন প্রযুক্তি ও বৈচিত্র্যসমূহের উন্নয়ন ঘটানোর পাশাপাশি সার,
কীটনাশক প্রভৃতির
ব্যবস্থাপনা অনুশীলন এবং সঠিক সেচ প্রযুক্তি নির্ণয়। তবে প্রধান প্রচেষ্টা হবে
একবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ খাদ্যশস্য উৎপাদন দ্বিগুণ করা, যে সময়ের মধ্যে
ধারণা করা হয় যে বাংলাদেশের জনসংখ্যাও দ্বিগুণ হয়ে ২৫ কোটিতে পৌঁছাবে। এর মধ্যে
ধান হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং সেইসঙ্গে ধীরে ধীরে গমকেও গুরুত্ব দেওয়া
হবে। বর্তমানের বিদ্যমান চাষযোগ্য জমি এবং তার নিবিড় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে
বিশ্বাস করা হয় যে, এই দ্বিগুণ খাদ্যশস্য উৎপাদন সম্ভবপর হবে।বিশ্ব
বাজারে বাংলাদেশী চায়ের অবস্থান ভাল এবং শ্রীলংকা ও ভারতের পরেই তৃতীয় স্থানে
রয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাজার প্রতিযোগিতা ক্রমশই বাড়ছে। বাংলাদেশ
চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি পুরানো গবেষণা
প্রতিষ্ঠান এবং এর বয়সকে বিসিএসআইআর বা সায়েন্স ল্যাবরেটরীর সঙ্গে তুলনা করা
চলে। বিটিআরআই চায়ের সঙ্করায়ণ এবং চা প্রক্রিয়াজাতকরণ গবেষণার মধ্য দিয়ে
চায়ের উৎপাদন ও গুণাগুণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এই ইনস্টিটিউটের
সাম্প্রতিক অর্জনের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন বৈচিত্র্যের ক্লোন চা উদ্ভাবন যেগুলি
দেশী ও বিদেশী উভয় বাজারে বাজারজাত করা হচ্ছে।বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা
ইনস্টিটিউট-বারি (BARI) ধান, পাট ও চা বাদে অন্যান্য শস্যের ওপর গবেষণা
কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। এই ইনস্টিটিউট গম, ডালজাতীয় শস্য, ফল ও শাকসবজি
প্রভৃতি নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সারাদেশে এই ইনস্টিটিউটের
সম্প্রসারিত উপকেন্দ্রের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত রয়েছে। এই উপকেন্দ্রগুলিতে
সম্প্রসারিত কর্মকান্ডের জন্য রয়েছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী এবং বিভিন্ন শস্যের
ফলন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ-সুবিধা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কৃষিখাতে
উন্নততর অর্থায়ন লাভকারী একটি প্রতিষ্ঠানও বটে। ব্যান্সডকের পরিচালিত জরিপ
অনুসারে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কৃষিখাতের গবেষণা ও উন্নয়ন
প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সর্বোচ্চ রাজস্ব ও উন্নয়ন বরাদ্দ লাভকারী প্রতিষ্ঠান।
একইসঙ্গে এই ইনস্টিটিউট সর্বাধিক বৈদেশিক সম্মান অর্জনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের
মধ্যেও অন্যতম। [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]বিজ্ঞাপন বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করে
পণ্য ও সেবা কিংবা নতুন ধারণা সম্পর্কে ভোক্তা বা ব্যবহারকারী সকলকে জানানোর একটি
ব্যবস্থা। এটি শুধু জানানোতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, সম্ভাব্য ক্রেতা বা ব্যবহারকারীদের কাছে
এসবকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করে,
সেগুলি ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ, এমনকি কখনও কখনও
প্ররোচিতও করে। আর এই কাজটি করে থাকে বিক্রেতা তথা উৎপাদনকারী নিজে, তার প্রতিনিধি কিংবা
বিপণনে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি। যে মাধ্যমেই বিজ্ঞাপন প্রচারিত হোক, এর জন্য
বিজ্ঞাপনদাতাকে ব্যয় বহন করতে হয়। বিজ্ঞাপনের ধরন নির্বাচন, তার জন্য কথা বা ছবি
সাজানো এবং তার উপস্থাপনা, প্রকাশনা, প্রচারণা ইত্যাদি অতীতে ব্যক্তিগতভাবে বা
বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নিজ স্থাপনা ও জনবলের সাহায্যে সম্পাদিত হলেও এখন এসব একটি
সুসংগঠিত পেশার কাজ এবং এসবের জন্য আছে ছোটবড় বিভিন্ন বিশেষায়িত বিজ্ঞাপনী
প্রতিষ্ঠান।বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনের অস্তিত্ব প্রাচীন হলেও অল্পদিন আগেও এর প্রসার ছিল
সীমিত। স্বাধীনতার পূর্বে বিজ্ঞাপন শিল্প বলতে তেমন কিছু ছিল না। শিল্প কারখানার
ব্যাপক বিকাশ না ঘটায় বিজ্ঞাপনের প্রয়োজনীয়তাও তেমন প্রকট ছিল না। ১৯৬৭ সালে
ঢাকায় বিটপী, ইস্ট এশিয়াটিক ও ইন্টারস্প্যান নামে তিনটি বিজ্ঞাপনী ফার্ম প্রতিষ্ঠা
লাভ করে। লিভার ব্রাদার্স এবং সমস্থানীয় খুবই সীমিতসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের পণ্য
বিপণনের বিজ্ঞাপনই ছিল এদের প্রধান ব্যবসা। এ পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়, বাংলাদেশে বিজ্ঞাপন
শিল্পের বিকাশ বলতে যা-কিছু তার সবই ঘটে ১৯৭১-এর দেশ স্বাধীন হবার পরবর্তী
সময়কালে।বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয় এমন
নিবন্ধিত বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৫০ এবং অনুমান করা হয় যে সংগঠিত ও
অসংগঠিত উভয় খাত মিলে দেশে মোট বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান আছে প্রায় ৫০০। তবে
প্রচারিত বিজ্ঞাপনের ৭০% ভাগই যায় বড় বড় বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এবং বাজারে
আধিপত্যের ক্রম-অনুযায়ী সাজালে হাতে গোণা এসব বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে
অ্যাডকম, এশিয়াটিক, বিটপী, ইউনিট্রেন্ড, গ্রে, ইন্টারস্পিড, পপুলার, ম্যাডোনা এবং
মাত্রা। ১৩% ভাগ বিজ্ঞাপনের প্রচার হয় অন্যান্য বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে
আর বিজ্ঞাপনের বাকি অংশ (১৭%) প্রচার করে উৎপাদনকারী/বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান নিজে, তাদের নিজস্ব বিপণন
শাখার সাহায্যে।বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমগুলিকে সীমানা অনির্ধারিত এবং সীমানা
নির্ধারিত এই দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। প্রথমোক্ত শ্রেণিতে পড়ে পত্র-পত্রিকা, সাময়িকী, বেতার ও টেলিভিশনের
মাধ্যমে দেয়া বিজ্ঞাপন এবং দ্বিতীয় শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে সেইসব বিজ্ঞাপন
যেগুলি কোম্পানি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ব্যবস্থাপনা বা বিপণন শাখার মাধ্যমে
বিলবোর্ডে ছবি বা লেখা এবং আলোকসজ্জিত প্রচারমূলক শব্দমালা বা প্রতিচ্ছবি, যাত্রা ও পথনাটক
ইত্যাদি কিংবা গাড়ির বডিতে বা বেলুনের গায়ে অাঁকা ছবি ইত্যাদি দ্বারা প্রচারের
ব্যবস্থা করে। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে বিজ্ঞাপন ব্যবসায়ের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ২০০
কোটি টাকা। বিজ্ঞাপন খরচের হার কত হবে তা নির্ভর করে বিজ্ঞাপন মাধ্যমের ধরন এবং
তাতে ব্যবহূত জায়গা বা সময়ের পরিমাণের ওপর। পিক সময়ে (সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত
১২টা পর্যন্ত) বাংলাদেশ টেলিভিশনে ৩০ সেকেন্ডের একটি বিজ্ঞাপন প্রচারের চার্জ
হচ্ছে ৯,
৪৫০ টাকা। তবে এই সময়ের মধ্যে শুধু একটি নির্ধারিত সময়েই প্রচার
করাতে চাইলে ৫০% বেশি চার্জ দিতে হয়। সংবাদ প্রচারের ঠিক আগে বা অব্যবহিত পরে
প্রচারের ক্ষেত্রে চার্জের পরিমাণ ৭০% বাড়ে এবং তা ১০০% হয় যদি বিজ্ঞাপন
প্রদর্শিত হয় সংবাদ বা ছায়াছবি প্রচারের মাঝখানের বিরতিতে। সন্ধ্যা ৭টার আগে
বিজ্ঞাপন প্রচারের চার্জ নিয়মিত চার্জের প্রায় অর্ধেক। কোন প্রতিষ্ঠান
টেলিভিশনের কোন অনুষ্ঠান প্রযোজনার মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ পেতে পারে।
সেক্ষেত্রে সন্ধ্যা ৭টার আগে প্রচারের একটি অনুষ্ঠানে সর্বমোট ১৮০ সেকেন্ড
বিজ্ঞাপন প্রচারের অধিকার পেতে এমন অনুষ্ঠানের ৬০ মিনিটের একটি এপিসোড প্রযোজনায়
ফি দিতে হয় আশি হাজার টাকা আর একই রকম শর্তে পিক সময়ে প্রচারের জন্য ফি দিতে হয়
এক লক্ষ টাকা। বাংলাদেশ টেলিভিশন বই এবং বিজ্ঞাপনবিহীন সাময়িকীর বিজ্ঞাপন
প্রচারের ক্ষেত্রে নির্ধারিত চার্জের ওপর ২৫% ছাড় দেয়। তবে এই ছাড়-সুবিধা ভর্তি
বা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য ছাপা গাইড
বই-এর জন্য প্রযোজ্য নয়। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানও এই ছাড়-সুবিধা পায় না। দেশের
বাইরে প্রস্ত্তত পণ্যসামগ্রীর বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ টেলিভিশন
নিয়মিত হারের ওপর ৬০% অতিরিক্ত চার্জ আদায় করে। বাংলাদেশ বেতারের বিজ্ঞাপন হার
টেলিভিশনের তুলনায় অনেক কম। বেতারে ১৫ সেকেন্ডের একটি বিজ্ঞাপন ১ থেকে ৫১ বার
পর্যন্ত প্রচারের ক্ষেত্রে চার্জ হচ্ছে প্রতিবার প্রচারের জন্য ৬০০ টাকা। বাংলাদেশ
বেতার একটি ক্রিকেট ম্যাচ প্রচারের স্বত্ব বিক্রয় করে ৪৫,০০০ টাকায় এবং
ফুটবল ম্যাচের জন্য নেয় ৩,০০০ টাকা। দেশে প্রচারিত পত্রিকাসমূহ বিজ্ঞাপন
প্রচারের জন্য যে চার্জ নেয় তার হার ভিতরের পৃষ্ঠাসমূহের জন্য কলাম ইঞ্চিপ্রতি
৪০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং প্রথম ও শেষ পৃষ্ঠার জন্য এর থেকে প্রায় তিন গুণ।বাংলাদেশে
অদ্যাবধি বিজ্ঞাপন শিল্পের যে প্রবৃদ্ধি ঘটেছে তার সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক
প্রবৃদ্ধি ও জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির একটি সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমানে প্রায় সকল
ধরনের বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠানই প্রচুর প্রতিযোগিতার সম্মুখীন। বিজ্ঞাপন
প্রতিষ্ঠানগুলি যাদের কার্যাদেশ নিয়ে ব্যবসা চালায় সেগুলির মধ্যে আছে বেসরকারি
খাতের দেশীয় কোম্পানি, বহুজাতিক কোম্পানি এবং বিভিন্ন এনজিও। তবে
বিজ্ঞাপন ব্যবসার ৬০% ভাগই আসে বহুজাতিক কোম্পানি থেকে আর ২৫% ভাগের উৎস হচ্ছে
দেশীয় বেসরকারি কোম্পানি। বাজারে যেসব পণ্য যতবেশি প্রতিযোগিতার সম্মুখীন, সেগুলির জন্য
বিজ্ঞাপনও ততবেশি প্রয়োজন। আর বিজ্ঞাপন বাজেটের বেশির ভাগই যায় ভোগ্যপণ্যাদির
প্রচারে। সাধারণত স্থানীয় বাজারে যেসব খাতের পণ্য ও সেবার চাহিদা বেশি সেগুলিই
বিজ্ঞাপনে বেশি ব্যয় করে থাকে। রপ্তানিমুখী শিল্পসমূহও বিজ্ঞাপনে অভ্যস্ত হতে
শুরু করেছে এবং তাদের এ কাজের সূচনা হয়েছে মূলত প্রচারমূলক পুস্তিকার
মাধ্যমে।সরকার বিজ্ঞাপন ব্যবসায়ের আইনগত দিক নিয়ন্ত্রণের জন্য সকল ধরনের
বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনদাতা ও বিজ্ঞাপন প্রচার সংস্থার মধ্যে চুক্তি
সম্পাদনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। এই চুক্তির সাধারণ শর্তাবলি মুদ্রণ, প্রকাশনা ও
গণযোগাযোগ সংক্রান্ত আইন-কানুনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তথ্য মন্ত্রণালয়ই মূলত
প্রধান নিয়ন্ত্রক এবং কোন নির্দিষ্ট মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে
শর্তাবলিতে পরিবর্তন আনতে হলে এই মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন। আবার ওষুধপত্র
বা ধূমপান সামগ্রীর বিজ্ঞাপনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। এছাড়া
সরকার বিজ্ঞাপনী সংস্থাসমূহ এবং প্রচার মাধ্যমের জন্য একটি সদাচরণ নীতিমালা
প্রণয়ন করেছে, যা আইনের মর্যাদা না পেলেও সাধারণভাবে মেনে চলা বাঞ্ছনীয়। এই
নীতিমালায় মদ, সিগারেট, শিশুদের জন্য শিল্পজাত খাদ্য,
মহিলা ও পুরুষদের
অন্তর্বাস এবং বড়ি ব্যতীত অন্যান্য জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর বিজ্ঞাপন প্রচার থেকে
বিরত থাকতে বলা হয়। একই সঙ্গে তা প্রচার মাধ্যমসমূহকে সামাজিক নিয়মাচার ও নৈতিক
মূল্যবোধ রক্ষা করে চলতে বলে, ধর্ম, ব্যক্তি বা সংস্থার প্রতি প্রত্যক্ষ
আক্রমণ থেকে বিরত থাকতে বলে, রুচিবিবর্জিত সকল বিষয় পরিহার করতে বলে এবং কোন
ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যাতে বিজ্ঞাপনে ব্যবহূত না হয় সেদিকে সতর্ক থাকতে
বলে।
No comments
লেখাটি আপনার কেমন লেগেছে অনুগ্রহ করে কমেন্ট করে জানাবেন।
আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। আপনিও আপনার জানা বা দেখা যে কোন ওইতিহাসিক-ভ্রমন স্থান সম্পর্কে অথবা আপনার লেখা কবিতা পাঠান আর আমাদের গান ও কবিতা ঘরের সদস্য হয়ে যান। ধন্যবাদ- all-banglakobita.com (ক্লিক করুন -আপনার লেখা)