Header Ads

জীবনের অংক মিলাতে গিয়ে অঝরে কাঁদলাম। জীবন যাপন!!! (গান ও কবিতা ঘর)







বাবা যেদিন বাজার থেকে আধা কেজি খাসির মাংস কিনে আনতেন সেদিন আমাদের ঘরে একটা বড় উৎসব আমেজ ভাব চলে আসত।
মা শাড়ির আচলকে কোমড়ে গুজে জিরা মসলা বাটতে বসে যেতেন। আমি কাচা মাংসগুলোকে নেড়ে চেড়ে দেখতাম,মুখের কাছে নিয়ে গেলেই মা দিত বকুনী।বলত "কাচা গিলে খাসনে,পেটে ছাগল হবে"।
আমি চোখ ড্যাব ড্যাব করে মা কে বলতাম "ছাগল হলে বেশ হবে মা, রোজ ই তো তাহলে মাংস খেতে পারব চিবিয়ে চিবিয়ে"।
মা আমার কপালে একটা চুমু খেয়ে হাসি মুখ করে বলত "আমার পাগল ছানা একটা"।
একটু দূরে বসে বাবা ঠোটের মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে হাসতেন মা ছেলের খুনসুটি দেখে ।

একসময় মশলা মিশিয়ে মা ঝোল ঝোলকরা মাংস উনুন থেকে নামাতেন। আমি দৌড়ে হামলে পড়তাম।একটা চামচে এক টুকরো আমায় বাড়িয়ে দিয়ে মা বলতেন -"ধর খোকা, নুন হয়েছে কিনা দেখ"। আমি প্রথম
টুকরো খেয়ে দুষ্ট গাল করে বলতাম -"এক টুকরোয় কি বুঝা যায়?
আরেক টুকরো দাও না মা, খেয়ে ঝটপট বলে দিই। মা আরেক টুকরো দিত। আমিও খেতাম। স্বাদ করে খেতাম। আর মায়ের শাড়ির আচলে আয়েশ করে মুখ মুছতাম।
সেদিন বাবা এক আড়াইশো মাংস এনেছিল। এত কম এনেছে কেন জানতে চাইলে বাবা মুখ মলিন করে বলেছিল "আজকের ছাগলটা তোর মত বাচ্চা, তাই মাংস কম দিয়েছে"।
সবে এক দুই গুণতে শিখেছি। মা যখন মসলা বাটায় ব্যস্ত তখন মাংস গুলো ধরতে ধরতে আনমনে গুণে দেখলাম মোট পনের টুকরো মাংস আছে।
একসময় মা আলু মাখিয়ে ঝোল করে মাংস রাধে। তিন টুকরো আমায় দেয় নুন ঝাল পরখ করার জন্যে। আমি খেতে খেতে হিসেব রাখি আর বারো টুকরো আছে।
রাতে মা প্লেটে করে আরো পাঁচ টুকরো ভাত মাখিয়ে দলা করে আমায় খাওয়ায়। আমি খেতে খেতে হিসেব রাখি আর সাত টুকরো আছে।
এরপরের দিন সকালেও আমার প্লেটে মাংস আসে।দুপুরেও মাংস আসে। খেতে খেতে হঠাৎ হিসেবে গন্ডগোল বেঁধে যায়। হিসেব করে দেখলাম বারো টুকরো মাংসই আমার পেটে।
বড় হবার পর আমি যখন অংক করা শিখেগেলাম । হঠাত অংক করতে গিয়ে একদিন একটা অংক মিলানোর চেষ্টা করলাম-
এক আড়াইশো মাংস যদি পনের টুকরো হয়। তবে আধা কেজি মাংস তিরিশ টুকরো। যদি পাঁচ টুকরো করে ভাগ করা হয় তবে তিনজনে দুই বেলা খেতে পারবে। কিন্তু যেবার বাবা আধা
কেজি মাংস আনতেন প্রত্যেক বারই আমার ভাগে পাঁচ টুকরো করে মোট ছয় বেলা মাংস জুটত।
অথচ বাবা-মায়ের দুইজনেরই খাসির মাংস ভীষণ প্রিয় ছিল।

আজ আমার ৪ তলা ফ্লাটে থাকি তিনজন। আমি, আমার স্ত্রী ও ছেলে। প্রতিদিনই প্রায় খাসির মাংস কেনা হয়। আগের মত আধা কেজি না। ২ কেজি, ৩ কেজি। কিন্তু আগের মত
সেই উচ্ছাস আর নেই, নেই মায়ের হাতের রান্নার সেই স্বাদ, নেই বাবার মুচকি হাসির মাঝে অফুরন্ত ভালবাসা।

No comments

লেখাটি আপনার কেমন লেগেছে অনুগ্রহ করে কমেন্ট করে জানাবেন।
আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। আপনিও আপনার জানা বা দেখা যে কোন ওইতিহাসিক-ভ্রমন স্থান সম্পর্কে অথবা আপনার লেখা কবিতা পাঠান আর আমাদের গান ও কবিতা ঘরের সদস্য হয়ে যান। ধন্যবাদ- all-banglakobita.com (ক্লিক করুন -আপনার লেখা)

Powered by Blogger.