একটি শ্লীল ইশতেহার (গান ও কবিতা ঘর)
তাসলিমা নাসরিন_ একটি শ্লীল ইশতেহার
তুমি দাঁড়াও তো একটু। একটু দাঁড়াও।
দাঁড়িয়ে
আমার শেষ কথা শুনে যাও, আমি তোমাকে চাই না,
আমি তোমাকে চাই না, না, চাই না তোমাকে।
তুমি দেখতে
ভালো, এ তোমার কোনও গুণ নয়।
তুমি কথা
বলো ভালো, এও তোমার কোনও গুণ নয়।
গুণ নয়, কারণ তুমি যা বলো মিথ্যে বলো।
তুমি আমাকে
ভালোবাসো, এ কোনও কারণ নয় তোমাকে চাওয়ার।
এরকম
অনেকেই বাসে, তোমার চেয়ে ঢের ঢের দেখতে ভালোরা,
ঢের ঢের মিথ্যে না বলারা।
তুমি যদি মনে করো আমি তোমাকে চাই যেহেতু তুমি আমাকে যেভাবে স্পর্শ করো,
ঠিক সেভাবেই আমি চাই কেউ স্পর্শ করুক আমাকে,
তুমি যদি মনে করো আমি তোমাকে চাই যেহেতু তুমি আমাকে
একটু একটু করে যেভাবে অন্ধকারের দিকে নিতে থাকো, ঠিক সেভাবেই আমি চাই কেউ নিক আমাকে,
তুমি যদি মনে করো আমি তোমাকে চাই যেহেতু তুমি আমাকে
যেভাবে
শরীরের হৈ
হল্লার মধ্যে গুম করে ফেলো, ঠিক সেভাবেই আমি
চাই কেউ করুক আমাকে,
ভুল মনে করো, তোমাকে
অনায়াসে আমি ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলতে পারি,
দরজা বন্ধ করে দিতে পারি, না খুলতে পারি সে দরজা যতদিন বেঁচে থাকো ততদিন।
বড় বেশি
পুরুষ হওয়ার অহংকার তোমার।
ননীটা
ছানাটা খেয়ে বড় হওয়া বংশের বাতি,
না চাইতেই সব পেয়ে যাওয়া,
প্রভু পুরুষ!
তোমার অহংকারের একফোঁটা মূল্য নেই এখানে।
তোমার পুরুষাঙ্গ তোমার যক্ষের ধন,
ভেবেছো ও দেখে কাতর হবো আমি,
ভেবেছো ওটিকে পুজো করবো আমি,
ভেবেছো ও না হলে বুঝি চলছে না,
ভুল ভেবেছো, তোমার
যক্ষের ধনকে আমি
বড় করুণার
চোখে দেখি!
লোভের জিভের মতো মোটে তো একটা ক্ষুদ্র অঙ্গ।
তোমার যে
অঙ্গটিকে আমার বড় ভয়, বড় ঘৃণা,
সে তোমার উরুসন্ধির ক্ষুদ্র পুরুষ অঙ্গটি নয়,
সেটি খুব বড়, তোমার মাথার
ভেতরে তার বাস,
তোমার মস্তিস্কের চেয়ে আকারে আকৃতিতে ঢের ঢের বড়, তোমার আসল পুরুষাঙ্গ।
ওটি
প্রতিদিন বিকট হচ্ছে, ওটি তোমার পাঁচ ফুট কিছু ইঞ্চি
শরীর ছিঁড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, ওটিকে জল সার দিয়ে বড় করছে
তোমার আত্মীয়রা, তোমার বন্ধুরা, তোমার
পড়শিরা, তোমার সহকর্মীরা, তোমার
প্রেমিকারা, তোমার স্ত্রীরা------------
যেদিকে দুচোখ যায় তোমার, দেখ, যারা আছে, সবার
হাতেই জল সার।
ইচ্ছে করে, তোমার ওই বৃহৎ অঙ্গটি গোড়াসুদ্ধ উপড়ে তুলে নিয়ে আসি,
ছুঁড়ে ফেলি আবর্জনায়, অথবা
কেটে টুকরো
টুকরো করি,
জলে ভাসিয়ে দিই,
বা পুড়িয়ে দিই।
নির্বংশ
করি।
তুমি যখন
আমাকে চোখ রাঙাও, তুমি নও, ওটি
রাঙায়,
তুমি যখন গর্ব করো তোমার ক্ষুদ্র অঙ্গ নিয়ে,
তুমি জানো না যে তুমি গর্ব করো তোমার বৃহৎ অঙ্গ
নিয়ে।
তুমি যখন
আমার দিকে ছুটে আসতে থাকো,
তুমি নও তোমার ওই অদৃশ্য বৃহৎ পুরুষাঙ্গটি আসে,
তুমি যখন আমাকে ছেড়ে যাও, তুমি নও, ওটি যায়।
তুমি যখন
আমাকে ঠেলে দাও ক্ষুদ্র অঙ্গটিকে চুমু খেতে,
আসলে তুমি নও, তোমার ওই
বৃহৎ অঙ্গটি আমাকে ঠেলে দেয়,
তুমি যখন আমার চুল মুখ বুক খামচে ধরে
যা ইচ্ছে
তাই করো, তুমি নও, তোমার ওই বৃহৎ
পুরুষাঙ্গটি করে।
অতৃপ্ত
পড়ে থাকি একা, আর তুমি যখন তোমার আঠালো পদার্থ
আমার শরীরে
ছুড়ে দিয়ে উঠে যাও,
তুমি নও, তোমার ওই বৃহৎ
অঙ্গটি যায়।
ধীরে ধীরে
তুমি জানো না তোমার মুখ চোখ বদলে যাচ্ছে,
তোমার নাক কান গলে যাচ্ছে,
তুমি আর আমার ঘ্রাণ নিতে পারছো না, আমাকে শুনতে পারছো না।
আমাকে
দেখতে পাচ্ছো না তুমি।
তোমার শরীর
আর তোমার শরীর নেই।
তুমি আস্ত
একটা পুরুষাঙ্গ হয়ে উঠছো,
প্রতিদিন বৃহৎ বিকট পুরুষাঙ্গ।
দেখছো তো, তোমাদের পুরুষদের বৃহৎ পুরুষাঙ্গগুলো চারদিকে মেয়েদের
দাড়িপাল্লায় ওজন করছে। মেয়েদের ন্যাংটো করছে, বোরখা পরাচ্ছে।
ওগুলোই
মেয়েদের বেশ্যা বানায়, ওগুলোই হেঁটে হেঁটে বেশ্যা
বাড়ি যায়,
ওগুলোই থুতু ছিটোয়।
ওই বৃহৎ
পুরুষাঙ্গগুলোই পণ দাবি করে। স্ত্রীদের পেটায়, আগুনে পুড়িয়ে মারে।
ওই বৃহৎ
পুরুষাঙ্গগুলোই ধর্ষণ করে ঘরে বাইরে, খুন করে।
দরজা খুলি
বা না খুলি, যদি দরজায় এসে দাঁড়াবার স্পর্ধা
কখনও করো,
তোমার ওই বৃহৎ বিকট পুরুষাঙ্গের অস্তিত্ব নির্মূল
করেই তবে কোরো।
যদি না
পারো, বলছি শুনে নাও, তোমাকে
চাই না,
তোমাকে চাই না,
চাই না তোমাকে
No comments
লেখাটি আপনার কেমন লেগেছে অনুগ্রহ করে কমেন্ট করে জানাবেন।
আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। আপনিও আপনার জানা বা দেখা যে কোন ওইতিহাসিক-ভ্রমন স্থান সম্পর্কে অথবা আপনার লেখা কবিতা পাঠান আর আমাদের গান ও কবিতা ঘরের সদস্য হয়ে যান। ধন্যবাদ- all-banglakobita.com (ক্লিক করুন -আপনার লেখা)