যে-কথা বলিতে চাই

    -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর




যে-কথা বলিতে চাই,
বলা হয় নাই,
সে কেবল এই--

চিরদিবসের বিশ্ব আঁখিসম্মুখেইদেখিনু সহস্রবারদুয়ারে আমার

অপরিচিতের এই চির পরিচয়এতই সহজে নিত্য ভরিয়াছে 

গভীর হৃদয়সে-কথা বলিতে পারি এমন সরল বাণীআমি নাহি জানি 

শূন্য প্রান্তরের গান বাজে ওই একা ছায়াবটে;
নদীর এপারে ঢালু তটেচাষি করিতেছে চাষ;
উড়ে চলিয়াছে হাঁসওপারের জনশূন্য তৃণশূন্য বালুতীরতলে


চলে কি না চলেক্লান্তস্রোত শীর্ণ নদী

নিমেষ-নিহতআধো-জাগা নয়নের মতো

পথখানি বাঁকাবহুশত বরষের পদচিহ্ন-আঁকাচলেছে মাঠের ধারে

ফসল-খেতের যেন মিতা,
নদীসাথে কুটিরের বহে কুটুম্বিতা 

ফাল্গুনের -আলোয় এই গ্রাম, ওই শূন্য মাঠ,
ওই খেয়াঘাট,
ওই নীল নদীরেখা, ওই দূর বালুকার কোলেনিভৃত জলের ধারে চখাচখি কাকলি-

কল্লোলেযেখানে বসায় মেলা-- 

এই সব ছবিকতদিন দেখিয়াছে কবিশুধু এই চেয়ে দেখা

এই পথ বেয়ে চলে যাওয়া,
এই আলো, এই হাওয়া,
এইমতো অস্ফুটধ্বনির গুঞ্জরণ,
ভেসে-যাওয়া মেঘ হতেঅকস্মাৎ নদীস্রোতেছায়ার নিঃশব্দ সঞ্চরণ,
যে আনন্দ-বেদনায় জীবন বারেবারে 

রেছে উদাসহৃদয় খুঁজিছে আজি তাহারি প্রকাশ  

ফাল্গুন, ১৩২২


No comments:

Post a Comment

লেখাটি আপনার কেমন লেগেছে অনুগ্রহ করে কমেন্ট করে জানাবেন।
আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। আপনিও আপনার জানা বা দেখা যে কোন ওইতিহাসিক-ভ্রমন স্থান সম্পর্কে অথবা আপনার লেখা কবিতা পাঠান আর আমাদের গান ও কবিতা ঘরের সদস্য হয়ে যান। ধন্যবাদ- all-banglakobita.com (ক্লিক করুন -আপনার লেখা)